কলমে- সাম্য শফিক
দেশটায় বহুবিধ অস্থিরতা চলছে।
অস্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থাপনায় চলছি আমরা দোলাচালে। এভাবে আর কতোদিন চলবে? বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফিতি, স্থিতিশীল কি আর হবে?
ব্যবসায়ীরা মানছে না, নির্বাহীদের কোন নির্দেশনা। ইচ্ছে মতো দাম বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। আবার নির্বাহী’রা, পরামর্শ দিচ্ছে। ন্যায্য মূল্যের বাজার করতে সুপারশপ গুলোতে যেতে। সমাধান দিচ্ছেন তারাই। কারণ, কথায় বলে না, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। সে জনশ্রুতি কিন্তু ঠিক। ডাক্তার আর রোগীর মাঝে যেমন থাকে ডায়াগনস্টিক।
সেখানে আছে রাজস্ব। আছে তাতে ভাগবাটোয়ারা কামাই। বলো শুনি ভাই। কয়টা মানুষের নাগালে সুপারশপ আছে। নিত্য দিনের সব কিছু কি সুপারশপে মেলে? আসলে আমরা তো আমজনতা। নিরক্ষর নির্বোধ বাঙ্গালি। আগেও যা ছিলাম, আলবৎ আজ-ও তাই আছি। নিশ্চয়ই অনুমেয় হবে, যদি
পড়ে থাকেন।
`বাঙালি মুসলমানের মন’
স্বাধীনতার পরে পড়ালেখা শেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শিক্ষিত কি হতে পেরেছি! বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ যেনো সেভাবে না হয়। এখনো তো তাই। চাকরি হলেই চলবে, মাইনে ঠিক পেলেই হবে। সেটাও যেনো হয়ে যাচ্ছে আজকাল মানুষের জন্য অনাধিকার।
তাই তো আজ সাধারণ মানুষ নির্বিকার। কোনকিছু বলার নেই, বাঁচতে হলে কিনতে হবে, খেতে হবে। রাজাদের আদেশ শুনতে হবে। তাছাড়া বাজারে তো পণ্যের অভাব নেই। ক্রেতার-ও অভাব নেই। দোকানে শপিংয়ে থকথকে ভীড়, দেখে নির্বাহীরা দায়সারা ভাবে বলে দিচ্ছে।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আসলে দেশটা তো উন্নয়নের মহাসড়কে। জীবনে গতি আনতে, বেশি দাম দিয়ে পণ্য কেনার অভ্যাস করতে হবে। প্রলুব্ধ করতে, হরদম চলছে চটকদার বিজ্ঞাপন। সাথে সান্ত্বনা যোগাতে কথার প্রলেপন, চারিদিকে যুদ্ধবিগ্রহ, যুদ্ধবিধ্বস্ত, বৈশ্বিক এমন অস্থিরতার মাঝে ব্যয়বহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। এমন উচ্চাশার কথা মানুষকে বিচলিত করে।
তিনবেলা খাওয়ার খেয়ে তো বেঁচে থাকতে পারছি। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলো, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ, ফি আমানিল্লাহ। এটাই অনেক কিছু। মানতে হবে, কিচ্ছু করার নেই। হ্যাঁ ঠিক তাই, মানতেই হবে।
ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, হচ্ছেটা কি? এটা কি গণতন্ত্র না-কি পুঁজিবাদ তন্ত্র। মুলত
দেশ চলছে তো পুঁজিবাদীদের হাতে।
দেশে এখন সর্বত্র দু’টো ধারা অব্যাহত। ক্রেতা-বিক্রেতা, মালিক-শ্রমিক অথবা রাজা-প্রজা। মাঝখানে তো আর কেউ নেই। বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই।
বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকলে, দেশ চালাতে সমস্যা হবে। জটিল চিন্তা চেতনার প্রয়োজন হবে। বহু বিভেদ তৈরি হবে। সেগুলো নিরসনে সহ্য, সহনশীল হতে হবে। সবার প্রয়োজন, সবার সামর্থ বিবেচনা করতে হবে। এতো ঝুটঝামেলার দরকার নেই। তারচেয়ে সেই ভালো, সমাজটাকে ভেঙে ফেলো। দুটো ধারায় দেশ পরিচালিত করো।
একটা সময় ছিলো দেশের সামাজিক সমতার জন্য। শ্রেণী বৈষম্য দুর করার জন্য আন্দোলন হতো। মিছিল-মিটিং হতো। স্থিতিশীলতার জন্য বিপ্লব হতো। মানুষের মনে আশার সঞ্চার হতো।
সেসব সমাজতান্ত্রিক ভাবনা গুলো কিভাবে উজাড় হলো! বিপ্লবীরা সব কোথায় হারালো। পুঁজিবাদের আগ্রাসন, সব-ই কি গিলে ফেললো?
বহুমাত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় কিছুটা জটিল হয়। সংশয় সঙ্ঘাত হয়। বিপ্লবে আসে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অশান্তি হয়। তারচেয়ে ভালো শিল্পবিপ্লব গড়ো। মালিক শ্রমিক ভাই ভাই। পুঁজিবাদের বিকল্প নাই।
স্থিতিশীলতার জন্য বলো। রাজনৈতিক মেরুকরণই ভালো। তাই তো আজ গণতন্ত্র তুমি, পুঁজিতন্ত্রের হাত ধরে চলো।