ঢাকা   ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ডিমলা মাঠে প্রার্থীরা

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশিত : বুধবার, মার্চ ২০, ২০২৪
  • 37 শেয়ার

এ হামিদ সরকার, নীলফামারী প্রতিনিধি:

তথ্য মতে, দেশে এখন ৬৪জেলায় ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৪, ১১, ১৮ ও ২৫ মে চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অবশিষ্টগুলোয় পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করতে পারেন বলে, জানা গেছে।

ইসির আংশিক তফসিল অনুসারে ৪ঠা মে প্রথম ধাপে ১৫৩টি, ১১ই মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬৫টি, ১৮ই মে তৃতীয় ধাপে ১১১টি ও ২৫শে চতুর্থ ধাপে ৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোন উপজেলায় কখন নির্বাচন হবে তা আগেই ইসি’র ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীগণ।

অনেকেই মনে করেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সর্বজনীন। এসব নির্বাচনে দলীয় ভাবমূর্তি তেমন কাজে আসে না। কারণ, প্রতিটি এলাকার অধিকাংশ মানুষই চান দলমতের ঊর্ধ্বে সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। তবে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে এলাকাবাসী বিভিন্ন কারণে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সরব হতে চান না। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার আগাম ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আশায় আগাম প্রচারণা শুরু করেছেন। যে কারণে এবার আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে ভিন্ন মাত্রায় এবং সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক হওয়ারো সম্ভাবনা রয়েছে।

এবার এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থী ইতোমধ্যে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে দোয়া ও সমর্থন কামনা করছেন। এ সময় বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে প্রার্থিতা জানান দিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ এলাকার ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের এমন আগাম প্রচারে সরব হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলার শহর-গ্রামসহ প্রত্যান্ত অঞ্চল।

এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য দোয়া চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেক প্রার্থীই উঠান বৈঠক, ইফতার পার্টি, সনাতনধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান, গণসংযোগ, পথসভা এবং কর্মী সমাবেশ শুরু করছেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডিমলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, মুজিবনগর সরকারের সদস্য ও সাবেক উপকর কমিশনার আব্দুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু, যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফেরদৌস পারভেজ ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে এই সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কোন দলীয় নেতাকর্মী এই প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

অপরদিকে সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবু নীরেন্দ্র নাথ রায়, মোফাক্কারুল ইসলাম (পেলব), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব উত্তম কুমার রায়, মো. আবু সাঈদ, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের জেলা সাধারণ সম্পাদক (সাংবাদিক) হামিদার রহমান, মো. স্বপন মিয়া, মো. ছায়েদ আলী, এ্যাড. সুজন চন্দ্র রায় ও জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর অধ্যাপক মাওলানা মজিবার রহমান।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সিদ্দিকা, উপজেলা মহিলা লীগ সভানেত্রী পারুল বেগম, উপজেলা তাঁতী লীগের সভানেত্রী জাহানারা বেগম ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত সাবিনা ইয়াসমিন।

সরেজমিনে উপজেলার শহর-গ্রামসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, এখনো তফশিল ঘোষণা হয় নাই। তারপরেও উপজেলার সকল ইউনিয়নে নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রার্থী, প্রার্থীর-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারের মধ্যেও নির্বাচনের শোরগোল শুরু হয়েছে। বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া, উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশ। অপরদিকে কে হবে ডিমলা উপজেলা পরিষদের পরবর্তী চেয়ারম্যান তা নিয়ে শুরু হয়েছে সাধারণ জনগণের মাঝে হিসাবনিকাশ ও নানান জল্পনা-কল্পনা। তারা স্থানীয় চা-পানের দোকানে বসে চায়ের আড্ডা মিলিয়ে করছেন নির্বাচন নিয়ে নানান বিশ্লেষণ ও আলাপচারিতা।

তবে, ভোট আসলেই সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের ভাষ্য, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই কেবল নেতাদের পা পড়ে এ অঞ্চলের গ্রামসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের আনাগোনা বেড়ে যায় বহুগুণ। নির্বাচন চলে গেলে এসব নেতারা আমাদের আর খোঁজখবর রাখেন না! তবে এবারের নির্বাচন প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের নির্বাচন হবে বলে জানান এলাকার মানুষজন। কারণ দলীয় মনোনয়ন দেওয়া নাই। কোন অঘটন না ঘটলে, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন বলে জানান তারা।

উল্লেখ্য, ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে ডিমলা উপজেলা পরিষদ গঠিত। এ উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৭১। তৃতীয় লিঙ্গের ১ জনসহ পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৯ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৫৯০ জন ।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৪